শিরক কি ? শিরকের পরিচয় ও ভয়াবহতা কিরুপ! শিরকের বিস্তারিত।

আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় পাঠক, আজকে আমরা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়- শিরক কি, শিরকের পরিচয় ও ভয়াবহতা সম্পর্কে কুরআন ও সহিহ হাদিস থেকে জানব।

শিরক কি বা শির্ক কাকে বলে ?

শিরক কি বা শির্ক কাকে বলে ?

প্রথমেই আমরা জানব শিরক কি বা শির্কের সংজ্ঞাঃ আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরিক করাই হলো শির্ক।

শিরকের সংজ্ঞায় আল্লামা ইবনলু ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেছেন, وه كرشلا نأ ذختي نم نود هللاًادن هبحي امك هللا بحي’ শিরক হলো আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ গ্রহণ করা এবং আল্লাহর মত তাকে ভালবাসা’।

শিরকের পরিচয় ও প্রকারভেদ : 

শিরক শব্দের অর্থ কি?

শিরকের আভিধানিক অর্থ- অংশ ( ُرشلا ِّكْ) । এই শব্দের মাছদার বা ক্রিয়ামলূ হ’ল ( ُشلاا ِرَ ْكا )। (আল-ইশরাক) অর্থ: শরীক করা। পারিভাষিক অর্থ: আল্লাহর সত্তা অথবা গুণাবলীর সাথে অন্যকে শরীক করা।

রসূলুল্লাহ (সঃ) শিরকের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন,

আল্লাহর জন্য অংশীদার সাব্যস্ত করা। অথচ তিনি (আল্লাহ) তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। তাওহীদের বিপরীত হলো শিরক। শিরক ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ (নিসা ৪/৪৮, ১১৬) ।

শির্ক কত প্রকার, কি কি ও প্রত্যেকের ব্যাখ্যা :
শিরকের পরিচয় ও প্রকারভেদ : 

শির্ক কত প্রকার, কি কি ও প্রত্যেকের ব্যাখ্যা :

উত্তরঃ শির্ক পাঁচ প্রকার। যথা-

  1. জ্ঞানগত শিরক,
  2. ব্যবহারগত শিরক,
  3. ইবাদতগত শিরক,
  4. অভ্যাসগত শিরক ও
  5. ভালবাসায় শিরক।

(১) জ্ঞানগত শিরক : এর অর্থ হ’ল আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে অদশৃ ্য জ্ঞানের অধিকারী মনে করা, বিপদ-আপদে অন্য কোন অদশৃ ্য সত্তাকে আহবান করা, অন্যের নামে যিকর করা বা ধ্যান করা ইত্যাদি। 

(২) ব্যবহারগত শিরক : এর অর্থ সৃষ্টির পরিকল্পনা ও সৃষ্টি জগতের পরিচালনায় অন্য কাউকে শরীক গণ্য করা। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকেই মসলমা ু নের রাজনীতি, অর্থনীতি, বিচারনীতি, 

শিক্ষানীতি, ধর্মীয় নীতি, সমাজনীতি 

সবকিছুপরিচালিত হবে। এটাই হ’ল 

তাওহীদের মলূ কথা এবং এর বিপরীতটাই হ’ল শিরক। 

(৩) ইবাদতে শিরক : এর অর্থ হ’ল ইবাদত বা উপাসনার ক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে অন্যকে শরীক করা। যেমন আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে সিজদা করা, অন্যের নামে যবহ করা, মানত করা, অন্যের নিকটে প্রার্থনা করা, অন্যকে ভয় করা,

আকাঙ্ক্ষা করা, যে আনগতু ্য ও সম্মান আল্লাহকে দিতে হয় সেই আনগতু ্য ও সম্মান অন্যের প্রতি প্রদর্শন করা, কবরপূজা করা ইত্যাদি। পৃথিবীর সবচাইতে প্রাচীনতম শিরক হ’ল মর্তিূ র্তিপূজা। 

(৪) অভ্যাসগত শিরক : এর অর্থ হ’ল মানষু অভ্যাস বশতঃ অনেক সময় শিরক করে থাকে। শিরকী কথা মখু দিয়ে উচ্চারণ করে, হালালকে হারাম করে, হারামকে হালাল করে ইত্যাদি। যেমন বিশ্বব্যাপী প্রচলিত রেওয়াজের দোহাই দিয়ে দেশে সূদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু রাখা, কারো সম্মানে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা, নিজেদের বানানো শহীদ মিনার, শিখা অনির্বাণ, শিখা চিরন্তন, স্মৃতিসৌধ, ভাষ্কর্য, টাঙ্গানো ছবি বা চিত্রে ইত্যাদিতে ফুলের মালা বা পুষ্পাঞ্জলী নিবেদন করা। 

(৫) ভালবাসায় শিরক : এর অর্থ বান্দার ভালবাসাকে আল্লাহর ভালবাসার ঊর্ধ্বে স্থান

দেওয়া। অর্থাৎ পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে বর্ণিতর্ণি বিধানের ঊর্ধ্বে কোন মজতা ু হিদ ইমাম, মফতী ু , পীর-আউলিয়া বা শাসনকর্তার আদেশ-নিষেধ ও বিধান সমহূকে অধিক ভালোবাসা ও তদনযায়ী ু আমল করা।

ছোট ও বড় শির্কের পরিচয় :

উপরিউক্ত এই পাঁচ প্রকার শির্ককে বড় শিরক বা শিরকে আকবার বলা হয়। আর লোক দেখানো দ্বীনদারীকে শিরকে আছগার বা ছোট শিরক বলা হয়। যা বড় শিরকের এক দর্জা নীচে এবং সবচেয়ে বড় কবীরা গোনাহ।

শিরকের ভয়বহতা ও পরিণতি :

কিছু উল্লেখ্যযোগ্য শিরকের ভয়বহতা ও পরিণতি নিচে তুলে ধরা হলো :

  1. শিরক ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ,
  2. শিরক জাহান্নাম ওয়াজিব করে দেয়,
  3. শিরক পূর্বের আমল সমহূ বিনষ্ট করে দেয়,
  4. শিরক জঘন্যতম পাপ,
  5. শিরক সবচেয়ে বড় গুনাহ

এখন নিচে শিরকের ভয়বহতা ও পরিণতি বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।

১. শিরক ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ :

আল্লাহ শিরকের গুনাহ ক্ষমা করবেন না। তিনি বলেন, নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। এ ব্যতীত অন্য সব, যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন। আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করল, বস্ত্ততঃ সে আল্লাহর প্রতি অপবাদ আরোপ করল’ (নিসা ৪/৪৮) ।

২. শিরক জাহান্নাম ওয়াজিব করে দেয় :

শিরক মানষুকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। মহান আল্লাহ তা’লা বলেন, ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপন করে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই’ (মায়েদাহ ৫/৭২)।

ইবনুমাস‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলল্লুাহ (সঃ) বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক না করে মৃত্যুবরণ করেন, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (রাবী বলেন) আমি জিজ্ঞেস করলাম, যদি সে যেনা করে এবং চুরি করে থাকে তবওু? তিনি বললেন, যদিও সে যেনা করে এবং চুরি করে থাকে।

অন্য হাদীছে রাসূলল্লুাহ (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করে মৃত্যুবরণ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে মৃত্যুবরণ করবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।

৩. শিরক পূর্বের আমল সমহূ বিনষ্ট করে দেয় :

আল্লাহ তা‘আলা বান্দার সৎ কাজগুলোকে বৃদ্ধি করে দেন। কিন্তু শিরক বান্দার ভাল আমলগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। মহান আল্লাহ তা’লা বলেন , যদি তারা শিরক করে তবে তাদের আমল সমহূ নষ্ট হয়ে যাবে (আন‘আম ৬/৮৮) । 

আয়াতের বাংলা তর্জমাঃ তোমার প্রতি এবং তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি প্রত্যাদেশ হয়েছে যে, যদি তুমি আল্লাহর শরীক স্থির কর, তবে তোমার কর্ম নিষ্ফল হয়ে যাবে। আর তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (যুমার ৩৯/৬৫) ।

৪. শিরক সবচেয়ে বড় গুনাহ : 

কবীরা তথা বড় গুনাহের একটি হ’ল শিরক। একবার রাসূলল্লুাহ (ছাঃ) ছাহাবীগণকে লক্ষ্য করে বললেন আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় গুনাহ সম্পর্কে সংবাদ দিব না? আমরা বললাম, অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা এবং পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া।

আবুহুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিতর্ণি , রাসূলল্লুাহ (ছাঃ) বলেন, তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক জিনিস থেকে বেচেঁ থেকো। ছাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! ঐ ধ্বংসাত্মক জিনিসগুলো কি কি?

তিনি জবাবে বললেন, আল্লাহর সাথে শরীক করা, যাদুকরা, অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা যা আল্লাহ হারাম করে দিয়েছেন। এছাড়াও সূদ খাওয়া, ইয়াতীমের সম্পদ আত্মসাৎ করা, যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা, সরলা নির্দোষ সতী-সাধ্বী মমিুনা মহিলাকে অপবাদ দেওয়া।

অন্য হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেন, সবচেয়ে বড় গুনাহ তিনটি।

  1. আল্লাহর সাথে শরীক করা,
  2. পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া এবং
  3. মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া। 

৫. শিরক জঘন্যতম পাপ : 

যেসব কাজ করলে আল্লাহর আনগুত্যের পরিবর্তে পাপ অর্জিত হয় শিরক তার অন্যতম। শিরককে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ) জঘন্যতম পাপ বলে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ বলেন, যে আল্লাহর সাথে শিরক করল সে জঘন্য পাপ করল (নিসা ৪/৪৮) । 

আব্দুল্লাহ ইবনুমাস‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলল্লুাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর নিকট জঘন্যতম পাপ কোনটি? জবাবে তিনি বললেন, কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ বানানো (শরীক করা), অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।

অতএব খালেছ তাওহীদ বিশ্বাস ও শিরক থেকে বেচেঁ থাকা ব্যতীত জান্নাত হাছিল করা সম্ভব নয়। সেকারণে আমাদেরকে আক্বীদার ক্ষেত্রে শিরক মক্তু তাওহীদ পন্থী এবং আমলের ক্ষেত্রে বিদ‘আত মক্তু সুন্নাতপন্থী হ’তে হবে। আল্লাহ আমাদের শিরক থেকে বেচেঁ থাকার তাওফীক দান করুন- আমীন! 

নিচে উপরিউক্ত আলোচনার উল্লেখ্যিত হাদিসের কিছু রেফারেন্স তুলে ধরা হলো।

[1]. মাদারেজসু সালেকীন ১/৩৩৯; মাসিক আল-

বায়ান, সংখ্যা ৬৯, নভেম্বর ১৯৯৭। [2]. বখারী ু হা/৪২০৭। 

[3]. ছহীহ বখারী ু হা/১২৩৭ ‘জানাযা’ অধ্যায় । 

[4]. ছহীহ মসুলিম হা/২৬৬৩ ‘ঈমান’ অধ্যায় । [5]. বখারী ু , মসুলিম, রিযাযুছ ছালেহীন হা/১৫৫০ । 

[6]. বখারী ু , মসুলিম, মিশকাত হা/৫২; রিয়াযুছ ছালেহীন হা/১৬১৪ । [7]. বখারী ু ; রিয়াযুছ ছালেহীন হা/৫০ । [8]. বখারী ু হা/৪২০৭ ।

শিরক নিয়ে আরও জানুন;

১. কি কি কাজ করলে শিরক হয়?

২. অন্যান্য ইসলামিক পোস্ট পড়ুন

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.